
রমজান মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মুসলিমরা সিয়াম পালন করে। কিন্তু অজ্ঞতা বা অসাবধানতায় অনেক সময় রোজা নষ্ট হয়ে যায়, যা আমাদের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতিকে বিঘ্নিত করে। ইসলামিক শরীয়ত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে কোন কোন কাজ রোজা ভঙ্গের কারণ। এই আর্টিকেলে কুরআন-হাদিসের আলোকে রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণগুলো সহজ ভাষায় আলোচনা করা হয়েছে। আপনার রোজা যেন কোনো ভুলে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন!
-
রোজা ভঙ্গের ১৫টি প্রধান কারণ
- ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ: সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাবার বা পানি খেলে রোজা ভঙ্গ হয় (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৭)।
- স্ত্রী সহবাস: রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত সহবাস করলে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কাযা ও কাফফারা উভয় ওয়াজিব হয় (বুখারী, হাদীস নং ১৯৩৬)।
- ইচ্ছাকৃত বমি করা: যদি কেউ ইচ্ছা করে বমি করে, তাহলে রোজা ভেঙে যায়। তবে অনিচ্ছাকৃত বমিতে রোজা ঠিক থাকে।
- হায়েজ বা নিফাসের রক্ত: মহিলাদের মাসিক বা সন্তান প্রসবের পর রক্ত দেখা দিলে রোজা ভঙ্গ হয় এবং পরবর্তীতে কাজা করতে হবে।
- নাকে বা কানে ওষুধ দেওয়া: নাসারন্ধ্র বা কানের মাধ্যমে তরল ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয় (ইমাম আবু হানিফার মতে)।
- ইনজেকশনের মাধ্যমে পুষ্টি গ্রহণ: শক্তিদায়ক ইনজেকশন (যেমন: স্যালাইন, গ্লুকোজ) নিলে রোজা ভেঙে যায় (বহু ইসলামিক স্কলারের মত)।
- ধূমপান বা তামাক সেবন: সিগারেট, জর্দা বা গুল খাওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ।
- মুখে ওষুধ বা ট্যাবলেট গ্রহণ: গলার ভেতরে ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা নষ্ট হয়।
- গীবত বা মিথ্যা বলা: হাদীসে এসেছে: “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও অপচয় থেকে বিরত থাকলো না, তার উপবাসে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই” (বুখারী)। তবে এতে রোজা ভঙ্গ হয় না, কিন্তু সওয়াব কমে যায়।
- শিঙা লাগানো বা রক্তদান: কিছু স্কলারের মতে, শিঙা লাগানো (রক্ত বের করা) রোজা ভঙ্গ করে (হানাফি মাযহাব)।
- অপারগতায় রোজা ভাঙলে: অসুস্থতা বা ভ্রমণের কারণে রোজা ভাঙলে পরবর্তীতে কাজা করতে হবে (সূরা আল-বাকারা ১৮৪)।
- ভুলে খেলে কী করবেন?: রোজাদার ভুলে খেয়ে ফেললে সাথে সাথে থামুন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। রোজা শুদ্ধ হবে।
- কাফফারা কী?: ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙ্গ করলে ৬০ দিন লাগাতার রোজা রাখা বা একজন গরিবকে ৬০ দিন খাওয়ানো ওয়াজিব।
- শাহাদত দেওয়ার মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ: যদি একজন মুসলিম নিজ ইচ্ছায় অন্য কোনো মুসলিমের জন্য শপথ গ্রহণ করেন, এটি রোজা ভঙ্গের কারণ হতে পারে।
- ক্লান্তি বা অসুস্থতা: অত্যধিক ক্লান্তি বা অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতে যদি কেউ খাবার গ্রহণ করেন তবে রোজা ভঙ্গ হতে পারে।
দ্রষ্টব্য ভুলে খেলে রোজা ভঙ্গ হয় না, তবে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে থেমে যেতে হবে।
আপনার রোজা হোক যথাযথ ও গ্রহণযোগ্য
রোজা শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণা সহ্য করার নাম নয়; এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মহান ইবাদত। তাই রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জানা এবং এড়িয়ে চলা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে আসে, তাহলে অন্যান্য মুসলিম ভাই-বোনের সাওয়াবের অংশীদার হতে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। আর কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে নিচে কমেন্ট সেকশনে লিখে জানান।
রমজানে সঠিকভাবে রোজা রাখতে চাইলে রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জানা জরুরি! এই আর্টিকেলটি পড়ুন এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করে সওয়াব কামাই করুন।
ব্রাশ বা টুথপেস্ট ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হয় কি?
সাধারণভাবে ব্রাশ করা বা টুথপেস্ট ব্যবহারে রোজা ভঙ্গ হয় না, তবে টুথপেস্ট গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হতে পারে। সুন্নাহ অনুযায়ী মিসওয়াক ব্যবহার উত্তম (ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৯৫)।
চোখে ড্রপ বা নাকে স্প্রে দিলে কি রোজা ভাঙে?
চোখে ড্রপ দেওয়া: অধিকাংশ আলেমের মতে, চোখের ড্রপ রোজা ভঙ্গ করে না, কারণ তা সরাসরি পেটে পৌঁছায় না।
নাকের স্প্রে: যদি স্প্রে নাকের গভীরে প্রবেশ করে এবং গলায় চলে যায়, তবে রোজা ভঙ্গ হতে পারে (হানাফি মাযহাব)।
স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভঙ্গ হয় কি?
না, স্বপ্নদোষ অনিচ্ছাকৃত হওয়ায় এতে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে গোসল ফরজ হয়, তাই যত দ্রুত সম্ভব গোসল করে নিতে হবে (বুখারী, হাদীস ১৯৩৫)।
রক্ত পরীক্ষা করালে বা ডায়াবেটিসের জন্য ব্লাড সুগার চেক করলে রোজা নষ্ট হয় কি?
সাধারণ রক্ত পরীক্ষা বা সুচের মাধ্যমে ব্লাড সুগার চেক করলে রোজা ভঙ্গ হয় না (আল-আজহার ফতোয়া কমিটি)।
অ্যাজমা রোগীর ইনহেলার ব্যবহার জায়েজ কি?
ইনহেলারে প্রয়োজনীয় ওষুধ ফুসফুসে যায়, পেটে নয়। তাই অধিকাংশ আলেমের মতে এটি জায়েজ (ড. ইউসুফ আল-কারাদাভির রায় অনুযায়ী)। তবে প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার এড়ানো উচিত।